PDF 48 LAWS OF POWER by Robert Greene and Joost Elffers-রবার্ট গ্রিন এবং জুস্ট এলফারস দ্বারা 48 ক্ষমতার আইন-টি ৪৮ লাউস অফ পাওয়ার

  

48 LAWS OF POWER by Robert Greene and Joost Elffers










লেখক-গবেষক রবার্ট গ্রিন দীর্ঘদিন ক্ষমতাবান লোকদের খুব কাছ  থেকে দেখেছেন। তাদের আচরণগত বৈশিষ্ট্য পর্যবেক্ষণ করে তুলে ধরেছেন ক্ষমতা অর্জন ও চর্চার মোট ৪৮টি সূত্র।



সূত্র ১:-প্রভুকে কখনো ছাপিয়ে যেও না, 

যারা তোমার উপরে আছে তাদের সবসময় স্বস্তিকর কর্তৃত্ব অনুভব করতে দাও।

তাদের সন্তুষ্টি অর্জন করতে বা পটাতে গিয়ে, অতিমাত্রায় নিজের প্রতিভা জাহির

করে বসো না কেননা এতে হিতে বিপরীত হতে পারে — ভয় ও অনিরাপত্তাবোধ

চাড়া দিয়ে উঠতে পারে। তোমার উর্ধ্বতনরা যেন সবসময় নিজেদের যা নয় তার

চেয়ে বেশি মেধাবী মনে করে। আর এভাবেই তুমি আরোহণ করবে ক্ষমতার শিখরে। 


 সূত্র ২:-বন্ধুদের ওপর বেশি আস্থা রেখো না,

শত্রুদের ব্যবহার করতে শেখো,

বন্ধুদের ব্যাপারে সাবধান — তারা সব থেকে দ্রুত বিশ্বাসঘাতকতা করে,

কারণ সহজেই ওদের মনে ঈর্ষা জন্ম নেয়। এমনকি তারা নষ্ট কিংবা উদ্ধত হয়ে যায়।

বরঞ্চ একজন প্রাক্তন শত্রুকে কাজে নামিয়ে দেখো সে বন্ধুর চেয়েও বেশি বিশ্বস্ত হবে,

যেহেতু তার নিজেকে প্রমাণ করাটা বেশি জরুরি। বস্তুত, দুশমনের চেয়ে দোস্তকেই

বেশি ভয়। যদি তোমার কোনো শত্রু না থেকে থাকে,

তবে তৈরির ব্যবস্থা করো।



 সূত্র ৩:-তোমার উদ্দেশ্য গোপন রাখো,

মানুষজনকে ভারসাম্যহীন আর অন্ধকারে রাখতে হলে তোমার কর্মের

পিছনের উদ্দেশ্য কখনো সামনে আনা যাবেনা। তারা যদি না-জানে তুমি

কী করতে যাচ্ছ, তারা প্রতিরক্ষার জন্য কোনো ব্যবস্থাও নিতে পারবেনা।

তাদের ভুল পথে এমনভাবে পরিচালিত করো, এমন ধোঁয়াশা সৃষ্টি করো,

তোমার উদ্দেশ্য বুঝতে পারার আগেই যেন তাদের অনেক দেরি হয়ে যায়।


 সূত্র ৪:-সবসময় প্রয়োজনের চেয়ে কম কথা বলো,

যখন তুমি কাউকে কথা দিয়ে স্পর্শ করতে চাও সেক্ষেত্রে তুমি যত

বেশি বলবে ততই তোমাকে সাদামাটা দেখাবে আর ততই তুমি নিজের

নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। তুমি যদি গতানুগতিক কিছুও বলে থাকো,

সেটা-ই অদ্বিতীয় শোনাবে যদি কথাটাকে অস্পষ্ট, দ্ব্যর্থকতাপূর্ণ আর দুর্বোধ্য

করে তুলতে পারো। শক্তিমান লোকেরা অল্প কথার দ্বারা

ছাপ ফেলে ও প্রভাব রাখে।


সূত্র ৫:-খ্যাতির ওপর অনেক কিছু নির্ভরশীল -

একে জীবন দিয়ে রক্ষা করো, 

মর্যাদাই ক্ষমতার স্তম্ভ। কোনকিছু ছাড়া শুধুমাত্র খ্যাতি দ্বারাই ভীতিপ্রদর্শন

ও জয়লাভ সম্ভব; অথচ একবার যদি পিছলে যাও, তখন তুমি উন্মুক্ত হয়ে

পড়বে আর সবদিক থেকে আক্রান্ত হতে থাকবে। তোমার সুনামকে

অবিসংবাদিত করে তোল। সম্ভাব্য আক্রমণের ব্যাপারে সবসময় সতর্ক

থাকো আর বাস্তবায়নের আগেই সেসব প্রতিহত করে দাও। একইভাবে,

শত্রুদের মর্যাদায় ছিদ্র করে দিয়ে তাদের ধ্বংস করতে শেখো।

এরপর সরে দাঁড়াও, আমজনতাই তাদের শূলে চড়াবে।


 সূত্র ৬:-যেকোন মূল্যে আকর্ষণ ধরে রাখো,

আগে দর্শনধারী পরে গুণবিচারী; যা দেখা যায় না তার কোনো মূল্য নাই।

কখনোই নিজেকে ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে ফেলো না আর তারপর বিস্মৃতির গর্ভে।

কাতার ছেড়ে দাঁড়াও। দৃশ্যমান হও, যেকোন মূল্যে। সত্ত্বাহীন জনসাধারণের

চেয়ে বড়, বর্ণাঢ্য আর রহস্যময় হওয়ার মধ্য দিয়ে নিজেকে আকর্ষণকারী চুম্বকে

পরিণত করো।


সূত্র ৭:-অন্যকে দিয়ে কাজ করাও, কিন্তু কৃতিত্ব নাও নিজে,

নিজের স্বার্থে অন্যদের জ্ঞান, বিদ্যা আর শ্রমকে কাজে লাগাও।

এমন সাহায্যের দ্বারা শুধু যে তোমার মূল্যবান সময় আর শক্তির সাশ্রয় হবে তাই নয়,

এর দ্বারা তুমি কাজেকর্মে ঐশ্বরিক নৈপুণ্য আর গতি পাবে। পরিশেষে,

তোমার সাহায্যকারীদের সবাই ভুলে যাবে আর তোমাকে মনে রাখবে।

যা অন্যকে দিয়ে করান যায় সে-কাজ কদাচ নিজে করতে যাবেনা।


সূত্র ৮:-অন্যদেরকে তোমার কাছে আসতে বাধ্য করো, 

প্রয়োজনে ফাঁদ পাতো যখন অন্য কাউকে কথামত চলতে বাধ্য করো,

তখন তুমি হও তার নিয়ন্ত্রণকর্তা। প্রতিপক্ষকে তার নিজের মতলব

ঝেড়ে তোমার কাছে টেনে আনাটাই সব থেকে ভালো।

লোভনীয় মুনাফার টোপ ফেলো — তারপরে আক্রমণ। গুটি তোমার হাতে।


 সূত্র ৯:-তর্ক দ্বারা নয়, কর্ম দ্বারা জয় করো, 

তর্কের দ্বারা তুমি যে বিজয়ই অর্জন করো না কেন প্রকৃতপক্ষে সেটা শ

ক্তির বৃথা অপচয়: এর দ্বারা তুমি যে তিক্ততা আর ঘৃণার উদ্ভব ঘটাও

তা মানুষের সাময়িক মত পরিবর্তনের চেয়ে অনেক বেশি দীর্ঘস্থায়ী।

কথা ছাড়া বরং কাজের দ্বারা কাউকে  একমতে আনাটা অনেক বেশি কার্যকর।

ব্যাখ্যা না করে প্রদর্শন করো।


সূত্র ১০:-সংক্রমণ : দুখী আর দুর্ভাগাদের এড়িয়ে চলো,

অন্যের দুঃখে তুমি মারা পর্যন্ত যেতে পারো — মানসিক অবস্থা রোগবালাইয়ের

মতোই সংক্রামক। তোমার মনে হতে পারে যে তুমি ডুবন্ত মানুষকে সাহায্য

করছ কিন্তু আদতে তুমি দুর্যোগ ডেকে আনছ নিজের জন্য। হতভাগ্যরা

নিজেদের জন্য দুর্ভাগ্য ডেকে আনে; যা তারা তোমার জন্যও ডেকে আনবে।

এর পরিবর্তে সুখী আর সৌভাগ্যবানদের পাশে থাকো।


 সূত্র ১১:-মানুষকে তোমার ওপর নির্ভরশীল রাখতে শেখো,

নিজের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ব রাখতে হলে তোমাকে অবশ্যই সদা আকাঙ্ক্ষিত

আর কাম্য হতে হবে। যত বেশি তোমার ওপর ভরসা করা হবে ততই তুমি

স্বাধীন হবে। মানুষকে তাদের সুখ আর সাফল্যের জন্য তোমার ওপর

নির্ভর করতে দাও তাহলে তোমার ভয়ের আর কিছুই থাকেনা। এতখানি

কখনই শিখিয়ে ফেলবে না যাতে তারা তোমাকে ছাড়াই কাজগুলো করতে পারে।


 সূত্র ১২:-শিকার ধরতে বুঝেশুনে সততা আর উদারতার আশ্রয় নাও,

একটা সৎ সুচিন্তিত পদক্ষেপ ডজন ডজন অসৎ পদক্ষেপকে আড়াল করে ফেলে।

দিলখোলা সৎ আর উদার আচরণ এমনকি সবচেয়ে সন্দেহপ্রবণ মানুষের মনকেও

অরক্ষিত করে তোলে। একবার যদি তোমার সুনির্বাচিত সততা তাদের রক্ষাকবচে

ছিদ্র করে দেয় তখন তুমি ইচ্ছমতো তাদের ধোঁকা দিতে আর ব্যবহার করতে পারবে।


 সূত্র ১৩:-মানুষকে তাদের স্বার্থ বুঝতে দিয়ে সহায়তা চাও,

কখনো দয়া বা করুণা চেও নাযদি কোনো বন্ধুর কাছে সহায়তা চাও,

অযথা তাকে তোমার অতীত সাহায্য আর ভালো কাজের কথা মনে করাতে

যেও না। সে তোমাকে উপেক্ষা করার রাস্তা ঠিক খুঁজে নিবে। এর চাইতে,

তোমার অনুরোধের মাঝে বা তোমাদের সন্ধির ভেতর এমনকিছু উপস্থাপন

করো যাতে তার ফায়দা থাকে, আর সেটাকে পাল্লায় ভারী দেখাও।

যখন নিজের লাভ দেখতে পাবে তখন সে নিজে থেকেই সাড়া দিবে।


 সূত্র ১৪:ভান করো বন্ধুর মতো, কাজ করো গুপ্তচরের মতো,

প্রতিপক্ষের ব্যাপারে জানাটা দুষ্কর। মূল্যবান তথ্য জোগাড় করতে

গুপ্তচরদের ব্যবহার করো যা তোমাকে এক কদম এগিয়ে রাখবে।

আরো ভালো হয়: নিজেই গুপ্তচরের ভূমিকায় নেমে যাও।

সুশীল সামাজিক মোকাবিলার ক্ষেত্রে, গভীরে গিয়ে তদন্ত করতে শেখো।

ঘুরিয়ে প্রশ্ন করে মানুষের দুর্বলতা আর গোপন উদ্দেশ্য জেনে নাও।

এরকম কোনো উপলক্ষ নাই যেখানে শৈল্পিক গোয়েন্দাগিরির সুযোগ থাকেনা।


সূত্র ১৫:-শত্রুকে পুরোপুরি গুড়িয়ে দাও,

মুসা (আ) থেকে আরম্ভ করে সমস্ত মহান নেতাই জেনে এসেছেন যে একজন

ভয়ংকর শত্রুকে অবশ্যই সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করতে হবে (কখনো কখনো

তাদেরকে কঠোর অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে এটা শিখতে হয়েছে)।

অঙ্গার যদি নেভাতে ভুলে যাও, তা যত আস্তেই জ্বলুক, একসময় দাবানল উঠবেই।

একেবারে নিশ্চিহ্ন করার চেয়ে মাঝপথে কোনকিছুকে থামিয়ে দেয়াটা বেশি ক্ষতিকর।

দুশমন পুনরুজ্জীবিত হবে, আর প্রতিশোধ নিবে। তাকে ভেঙে ফেল,

শুধু শরীর নয় মনের দিক থেকেও।


 সূত্র ১৬:-শ্রদ্ধা-সম্মান বাড়াতে অনুপস্থিতির আশ্রয় নাও,

অতি সহজলভ্যতা দ্রব্যমূল্য কমিয়ে দেয়: যত বেশি তোমাকে দেখা যাবে শোনা

যাবে তত বেশি সাধারণ হয়ে যাবে তুমি। যদি কোনো গোষ্ঠীতে তুমি ইতোমধ্যে

প্রতিষ্ঠা পেয়ে থাকো, সাময়িক প্রস্থান তোমাকে আরো বেশি আলোচনার বিষয়,

আরো বেশি প্রশংসিত করবে। কখন যেতে হবে এটা জানা চাই।

দুষ্প্রাপ্যতার দ্বারা মূল্য অর্জন করো।


 সূত্র ১৭:-অন্যদের ভীতি সংশয়ে রাখো :অনিশ্চয়তায় ঘিরে ফেলো, 

মানুষ অভ্যাসের দাস; অন্যের গতিবিধির সাথেও তাদের অভ্যস্ততার মিল থাকতে হয়।

তোমার কর্মপদ্ধতি যদি সহজে অনুমেয় হয় তাহলে তোমার উপর মানুষের নিয়ন্ত্রণ

চলে আসবে। ঘুটি নিজের হাতে আনো: বুদ্ধি খাটিয়ে অননুমেয় হয়ে ওঠো।

তোমার চালচলনের কোনো হদিস বা উদ্দেশ্য যখন মাথায় আসবে না তখন

অন্যেরা ভারসাম্য হারিয়ে ফেলবে, আর তোমার আচরণের ব্যাখ্যা খুঁজতেই

খুঁজতেই তারা হাঁপিয়ে উঠবে। সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে গেলে, এই পদ্ধতিতে

মানুষকে ভয় আর আতংকের মধ্যে রেখে নিজের উদ্দেশ্য হাসিল করা সম্ভব।


সূত্র ১৮আত্মরক্ষার্থে দুর্গ গড়ে তুলো না — বিচ্ছিন্নতা ভয়াবহ ব্যাপার,


এ বিশ্ব ভয়ংকর আর শত্রু আছে সর্বত্রই — প্রত্যেককেই আপন প্রাণ বাঁচাতে হয়।

দুর্গ দেখতে মনে হয় সবচেয়ে নিরাপদ।কিন্তু বিচ্ছিন্নতা তোমাকে রক্ষা করবে যতটা

না তার চেয়ে বেশি বিপদে ফেলবে — এটা তোমাকে একইসাথে মূল্যবান খবরাখবর

থেকে বিচ্ছিন্ন করবে, তোমাকে সহজ আর সুস্পষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করবে।

তার চেয়ে ভালো ভিড়ের মধ্যে উপস্থিত থেকে বন্ধু-শত্রু খোঁজা। জনস্রোতই

তোমাকে শত্রুদের থেকে বাঁচাবে।


 সূত্র ১৯:-কার সাথে কারবার করছ তোমাকে জানতে হবে

— ভুল মানুষকে ক্ষেপিও না,

দুনিয়ায় নানা কিসিমের মানুষ আছে, তুমি কখনোই এটা ধরে নিতে পারো না

যে তোমার কৌশল নির্বিশেষে সবার উপরেই খাটবে। কাউকে কাউকে প্রতারিত

করলে বা পিছনে ফেললে তারা জনমভর প্রতিশোধের রাস্তা খুঁজে ফেরে।

ভেড়ার চামড়া গায়ে তারা আদতে নেকড়ে। তোমার শিকার ও শত্রু নির্বাচনে

সাবধান হও — কখনো ভুল মানুষকে ঠকিও না বা রাগিও না।


 সূত্র ২০:-কারো কাছে নিজেকে সমর্পণ করবে না,

আহাম্মকরাই দ্রুত মানুষের পক্ষ নেয়। নিজের ছাড়া অন্য কিছুর বা কারোর পক্ষ নিও না।

নিজে স্বাধীন থাকলে, তুমি অন্যের ওপর প্রভুত্ব  করতে পারো —

মানুষকে একে অন্যের বিরুদ্ধে লাগিয়ে, নিজের আয়ত্তে রাখতে পারো।


সূত্র ২১:-গাধা ফাঁদে ফেলতে গাধা সাজো — বোকামির ভান করো,

কেউই তার পাশের জনের চেয়ে বোকা হওয়া পছন্দ করে না।

ফন্দি হলো, নিজের শিকারকে সুযোগ দেয়া যেন সে নিজেকে বুদ্ধিমান ভাবে —

কেবল বুদ্ধিমান হয়, যেন সে নিজেকে তোমার চেয়ে বেশি বুদ্ধিমান ভাবে।

একবার আশ্বস্ত হলে, কখনো তারা চিন্তাই করবে না যে তোমার গোপন অভিসন্ধিও

থাকতে পারে।


সূত্র ২২:-পরাজয় স্বীকারের কৌশলকে কাজে লাগাও:

দুর্বলতাকে শক্তিতে পরিণত করো,

যখন তুমি প্রতিপক্ষের চেয়ে দুর্বল, স্রেফ সম্মান বাঁচাতে লড়তে যেও না,

বরং আত্মসমর্পণ করো। আত্মসমর্পণ তোমাকে নিরাময়ের সময় দেয়,

বিজেতাকে উৎপীড়ন আর উত্ত্যক্ত করার দেয়, সময় দেয় তার ক্ষমতা হ্রাস

না পাওয়া পর্যন্ত। তোমাকে লড়াই করে হারানর তৃপ্তি তাকে দেয়া যাবে না -

তার আগেই পরাজয় মেনে নাও। অন্য চাল চালার মধ্য দিয়ে তাকে অধৈর্য

আর উদ্বিগ্ন করে তোলো। হার মানাকে ক্ষমতা অর্জনের কৌশল হিসাবে

ব্যবহার করতে শেখো।


সূত্র ২৩:-নিজের বলকে কেন্দ্রীভূত করো,

সবচেয়ে শক্তিশালী বিন্দুতে জড়ো করার মধ্য দিয়ে তোমার উদ্যম এবং

সামর্থ্যকে সংরক্ষণ করো। এক অগভীর খনি থেকে আরেক অগভীর

খনি খোড়াখুড়ি করার চাইতে উত্তম, সবচেয়ে সমৃদ্ধ খনিটা বেছে নিয়ে

সেটাকে আরো বিস্তৃত করা — তীব্রতার কাছে আধিক্য সবসময় পরাজিত হয়।

ওপরে ওঠার লক্ষে যখন তোমার ক্ষমতার উৎসগুলো খুঁজতে যাও, তখন প্রধান

পৃষ্ঠপোষকটাকে বের করো, এটা সেই স্বাস্থ্যবান গাভী যে তোমাকে অনাগত সুদীর্ঘ

সময় ধরে দুধ সরবরাহ করতে থাকবে।


সূত্র ২৪:-সুদক্ষ আমলা হয়ে ওঠো,

একজন প্রকৃত আমলা এমন এক জগতে বিচরণ করে যেখানে সমস্তকিছু

ক্ষমতা আর রাজনৈতিক চাতুরীকে ঘিরে আবর্তিত। সে পরোক্ষ উপায়ে

রাজত্ব করার শিল্প আয়ত্ত্বে এনেছে; সে ওপরমহলকে তুষ্ট রাখে, তাদের

সামনে নতজানু হয়, এবং আদতে প্রত্যেকের ওপর কর্তৃত্ব রাখে তার

মেকি বিনয় আর নমনীয় ব্যবহারের দ্বারা। রাজতন্ত্রের নিয়ম শেখো

ও প্রয়োগ করো তাহলেই রাজসভায় তুমি কতটা উপরে উঠবে তার কোনো

সীমা পরিসীমা থাকবে না।


 সূত্র ২৫:-নিজেকে বিনির্মাণ করো,

সমাজ তোমাকে যে ভূমিকা গছিয়ে দেয় সেটাকেই মেনে নিও না।

নিজেকে পুনঃনির্মাণ করে নতুন পরিচিতি গড়ে নাও, যেমনটা সবার

মনোযোগের দাবি রাখে এবং কখনো দর্শককে একঘেয়ে অনুভব করতে দেয় না।

অপরকে তোমার ভাবমূর্তি ঠিক করতে দিও না বরং নিজেই এর নিয়ন্তা হও।

জনসম্মুখে তোমার কাজে ও ভঙ্গিতে নাটকীয় ফিকির যোগ করো —

তোমার ক্ষমতা বেড়ে যাবে এবং তোমার চরিত্রকে জীবনের চেয়ে বড় দেখাবে।


সূত্র ২৬:-নিজের হাত পরিচ্ছন্ন রাখো,

অবশ্যই নিজেকে শিষ্টতা ও উৎকৃষ্টতার আদর্শ হিসেবে তুলে ধরতে হবে:

তোমার হাতে যেন কখনোই ভুল-ত্রুটি আর অপকর্মের কালো দাগ না লাগে।

নিজেকে নিষ্কলুষ উপস্থাপন করতে হলে তুমি নিজের সংশ্লিষ্টতা গোপন করতে

অন্যদের বলির পাঁঠা হিসেবে ব্যবহার করো।


সূত্র ২৭:-মানুষের বিশ্বাসকে পুঁজি করে পীরের মুরিদের

মতো অনুসারী তৈরি করো,

একটা কিছুতে বিশ্বাস রাখার জন্য লোকজনের দুর্দমনীয় আকাঙ্ক্ষা থাকে।

এ ধরনের বিশ্বাসের ফোকাস বিন্দুতে থাকতে হলে তাদের একটা কারণ উপহার দাও,

অনুসরণ করার জন্য নতুন বিশ্বাস দাও। তোমার কথাকে অস্পষ্ট কিন্তু অঙ্গীকারপূর্ণ রাখো;

বাস্তবতা এবং স্পষ্ট চিন্তার চেয়ে উদ্দীপনার ওপর বেশি জোর দাও।

তোমার নতুন শিষ্যদের পালন করার মতো অর্চনা দাও,

তোমার স্বার্থে বলি দিতে শেখাও। পূর্ণাঙ্গ ধর্মবিশ্বাস এবং মহতী উদ্দেশ্যের অনুপস্থিতিতে,

নতুন দ্বীন তোমাকে বর্ণনাতীত ক্ষমতা এনে দিবে।


সূত্র ২৮:-সাহসের সাথে কাজে নামো,

যদি কোনো একটা কাজের পন্থা নিয়ে সন্দিহান থাকো, তাহলে সেটা করার

চেষ্টা বাদ দাও। দ্বিধা আর সংশয় তোমার কার্যসাধন ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

ভীরুতা ভয়ংকর: সাহসের সাথে কাজে হাত দেয়া উত্তম।

ঔদ্ধত্যের কারণে তোমার ত্রুটি হয়ে গেলেও আরো বেশি ঔদ্ধত্য

দ্বারা সেসব সহজেই শুধরে নেয়া যায়। সাহসীর সবাই গুণ গায়;

ভীরুকে কেউ সম্মান করে না।


সূত্র ২৯:-একেবারে শেষ পর্যন্ত পরিকল্পনা করে রাখো,

শেষটাই সব। আখেরতক পরিকল্পনা করো, সম্ভাব্য সকল পরিণতি,

বাধাবিপত্তি, এবং যেসব ঘোরপ্যাঁচের কারণে তোমার পরিশ্রম উলটে

অন্যদের খ্যাতি এনে দিতে পারে সেসব মাথায় রাখো। একেবারে শেষ

পর্যন্ত পরিকল্পনা করে রাখলে তুমি পরিস্থিতির দ্বারা আচ্ছন্ন হবে

না এবং কোথায় থামতে হবে সেটাও তোমার জানা থাকবে।

অনেক দূর অবধি চিন্তাভাবনা করে ভাগ্যকে মৃদুভাবে পথ দেখাও

আর ভবিষ্যত নির্ধারণে সাহায্য করো।


সূত্র ৩০:-তোমার অর্জনগুলোকে যেন সহজসাধ্য দেখায়,

তোমার কাজ দেখে মনে হওয়া চাই সহজ এবং অনায়াসেই সংঘটিত হয়েছে।

তাদের পেছনে যত শ্রম আর অনুশীলন ব্যয় হয়, যত চতুর কৌশল থাকে,

সেসব গোপনই রাখতে হবে। যখন কাজ করবে, নিরুদ্যম হয়ে করবে,

যেন চাইলেই আরো অনেক বেশি করতে পারতে। কত কঠিন পরিশ্রম

করেছ সেটা প্রকাশ করার লোভ সামলাও — এতে শুধুই প্রশ্ন ওঠে।

কাউকে তোমার চাল শিখিয়ে দিও না নচেৎ সেসব তোমার বিরুদ্ধেই ব্যবহৃত হবে।


সূত্র ৩১:-বিকল্পসমূহ নিয়ন্ত্রণে রাখো : নিজের নির্বাচিত

তাস দিয়ে আর সবাইকে খেলাও,

সেরা ধোঁকাবাজি হলো অপরকে মনোনয়নের সুযোগ দেয়া : তোমার শিকার মনে

করে নিয়ন্ত্রণ তাদের, কিন্তু আদতে তারা নিজেরাই তোমার হাতের পুতুল।

এমনসব বিকল্প তাদের দাও যাতে তারা যেটাই বেছে নিক না কেন ফলাফল

সবদিক দিয়ে তোমার পক্ষে আসে। তাদের দুইটা খারাপ জিনিসের মধ্যে

থেকে কম খারাপটা বেছে নিতে বাধ্য করো, যেখানে উভয়তেই লাভ আসলে

তোমার। ওদের শাঁখের করাত ধরিয়ে দাও: যেদিকেই হাত রাখুক কাটা পড়বে।

সূত্র ৩২:-মানুষের মধুর কল্পনার সাথে তাল মিলিয়ে চলো,

সত্য কদাচিৎ এড়িয়ে চলা হয় কারণ সে কুৎসিত আর অপ্রিয়। সত্য ও বাস্তবতার

পক্ষ কখনো নেবে না যদি না তুমি মোহভঙ্গ হেতু উৎসারিত তাদের ক্রোধের জন্য

প্রস্তুত থাকতে পার। জীবন এত কর্কশ আর ক্লান্তিকর যে আমাদের মধ্যে যারা

মরুভূমিতে মরীচিকার মতো প্রেমলীলা উদ্ভাবন করতে পারে অথবা রূপকথার

ভেলকি লাগাতে পারে: তাদেরই লোকে ঘিরে ধরে। জনসাধারণের কেচ্ছাকাহিনীতে

তাল দিয়ে চলতে পারার মধ্যেই অসামান্য ক্ষমতা নিহিত।

সূত্র ৩৩:-প্রত্যেকের স্পর্শকাতর বিষয়গুলো

আবিষ্কার করো

সবারই কোনো না কোনো দুর্বলতা থাকে, দুর্গ প্রাচীরের কোনো ফাটল যেমন।

সেই দুর্বলতা সাধারণত অনিরাপত্তার কারণ হয়, অদম্য কোনো অনুভূতি বা চাহিদা;

কিংবা কোনো গোপন অভিরুচিও হতে পারে। সে যা-ই হোক, একবার সন্ধান পেলে,

সেটা হবে তোমার হাতের লাটাই যা দিয়ে সুবিধামত তুমি তাদের নাচাতে পারবে।

সূত্র ৩৪:-চলনে রাজসিক হও : রাজার মান

পেতে রাজার চাল চলো,

তুমি যেমন তোমার দুনিয়া তেমন; শেষ বিচারে, যদি সস্তা আর মামুলি হও

মানুষ তোমাকে অশ্রদ্ধা করবে। কারণ যে রাজা সে আগে নিজেকে সম্মান করে

এবং অন্যান্যদের মধ্যে সেই একই শ্রদ্ধাবোধ জাগিয়ে তোলে। রাজোচিত

আচরণ করলে এবং নিজের ক্ষমতা সম্বন্ধে নিঃসংশয় রইলে, এমন মনে হবে

যেন রাজমুকুট তোমার জন্য অবধারিত।

সূত্র ৩৫:-সময়জ্ঞানের নিপুণ বিদ্যা আয়ত্তে আনো,

কখনো হঠকারিতা দেখাবে না — তাড়াহুড়ো নিজের ওপর আর সময়ের ওপর

তোমার নিয়ন্ত্রণহীনতা প্রকাশ করে দেয়। সবসময় ধৈর্যশীল থাকো, যাতে করে

মনে হয় তোমার জানা আছে যে সময়ের সাথে সবকিছু আপনি চলে আসবে

তোমার কাছে। সঠিক সময়টা বের করার জন্য ডিটেকটিভ বনে যাও;

কালের আত্মাকে শুঁকে শুঁকে বের করে আনো, হাওয়া তোমাকে ক্ষমতার

দিকে টেনে নিয়ে যাবে। সময় কখন প্রস্তুত হয়নি সেটা জানতে হবে আর সেই

সাথে মোক্ষম সময়ে ঘা মারাটাও।

সূত্র ৩৬:-যেসব তুমি পাবে না সেসবকে তাচ্ছিল্য করো :

উপেক্ষা করাই শ্রেষ্ঠ প্রতিশোধ,

তুচ্ছাতিতুচ্ছ সমস্যাকে স্বীকৃতি দিলে তাদের একইসাথে অস্তিত্ব আর বিশ্বাসযোগ্যতা

দান করা হয়। শত্রু প্রতি যত মনোযোগ দিবে, তত সে শক্তিশালী হবে; একইভাবে

একটা ছোট্ট ত্রুতিকে ঠিক করতে গেলে সেটা কদাচিৎ বেশি খারাপ আর দৃশ্যমান

হয়ে যায়। মাঝে মাঝে কিছু জিনিসকে একলা ছেড়ে দেয়া উচিৎ।

যদি এমন কিছু থাকে যেটা তুমি চাও কিন্তু পাবে না, তাকে উপেক্ষা করো।

যত কম উৎসুক হবে, তত তোমাকে উঁচু দেখাবে।

সূত্র ৩৭:-আকর্ষক প্রদর্শনীর ব্যবস্থা রাখো,

আকর্ষণীয় ভাবমূর্তি আর মহতী সাংকেতিক অঙ্গভঙ্গি চতুর্দিকে ক্ষমতার জ্যোতি ছড়ায়

— সকলেই তাদের প্রতি সাড়া দেয়। চারপাশের লোকজনের জন্য যাত্রাপালার

আয়োজন করো, তারপর চমকপ্রদ দৃশ্য আর প্রভাবশালী প্রতীকসমূহের

অবতারণা করো যাতে করে তোমার উপস্থিতি দ্যুতিমান হয়। তোমার সুরত

দেখে এমন ভ্যাবাচ্যাকা খাবে যে কেউ খেয়ালই করবে না

প্রকৃতপক্ষে তুমি কী করে চলেছ।


সূত্র ৩৮:-নিজের মতো করে ভাবো কিন্তু

আচরণ করো অন্যের মতো,

যদি তুমি সময়ের বিরুদ্ধে চলার প্রদর্শনী করো, তোমার রীতিবিরোধী চেতনা

আর প্রথাবিমুখ চালচলন দেখিয়ে বেড়াও, লোকে ভাববে তুমি কেবল দৃষ্টি

আকর্ষণ করতে চাও আর বুঝি সবাইকে নিচু চোখে দেখো। ওদের হেয় প্রতিপন্ন

করেছ বলে তোমাকে শাস্তি দেয়ার একটা না একটা উপায় তারা খুঁজে বের করবেই।

তার চেয়ে বরং সাধারণের মধ্যে মিশে স্বাভাবিক আচরণ করাটা ঢের নিরাপদ।

সহনশীল বন্ধুবান্ধব আর যারা তোমার অনন্যতার নিশ্চিত সমাদর করে কেবলমাত্র

তাদের সামনেই নিজের মৌলিক সত্ত্বা প্রকাশ করো।


সূত্র ৩৯:-ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করো,

ক্রোধ ও আবেগ কৌশলগতভাবে সৃজনক্ষমতার বিপরীতে কাজ করে।

সদা লক্ষ্যে অবিচল এবং শান্ত থাকবে। কিন্তু যদি শত্রুদের রাগিয়ে তুলে

নিজে সুস্থির থাকতে পারো, নিশ্চিত সুবিধা তোমার। শত্রুদের ভারসাম্যহীন

করে দাও : ওদের আত্মাভিমানে ফাটল খুঁজে বের করো যার মধ্য দিয়ে তুমি

ওদের চালনা করতে পারবে।


সূত্র ৪০:-বিনা পয়সার খাবার উপেক্ষা করো,

বিনামূল্যে দেয়া জিনিস সবসময় ভয়ংকর — সাধারণত এর পেছনে কোনো

ছলনা অথবা গোপন অভিসন্ধি থাকে। যা কিছুর দাম আছে তার জন্য মূল্য

দিতেই হয়। নিজের খরচ নিজে চুকিয়ে চললে তুমি কৃতজ্ঞতা, অপরাধবোধ

এবং প্রতারণা থেকে মুক্ত থাকতে পারবে। এমনকি পুরো পয়সা মিটিয়ে

দেয়াও কখনো কখনো বুদ্ধিমানের কাজ — উৎকর্ষ সস্তাতে পাওয়া যায় না।

ব্যয়ের ব্যাপারে মুক্তহস্ত হও আর নিজের টাকাকে সচল রাখো, কারণ উদারতা

একটা নিদর্শন আর ক্ষমতা আকর্ষণের চুম্বকও বটে।


সূত্র ৪১:মহৎ মানুষের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে যেও না,

আদিতে যা হয় তাকে সবসময় পরেরগুলোর চেয়ে বেশি ভালো আর অনন্য মনে হয়।

যদি তুমি কোনো বড় মানুষের উত্তরসূরি হও অথবা বিখ্যাত মা-বাবার সন্তান হও,

তাদেরকে ছাড়িয়ে যেতে হলে তোমাকে তাদের দ্বিগুণ অর্জন করতে হবে।

তাদের ছায়ায় হারিয়ে যেও না, অথবা যে অতীত তোমার সৃষ্টি নয় তার

মাঝে আটকা প'ড় না : নিজের নাম আর পরিচয় দাঁড় করাতে তোমার

গতিপথ বদলাও। কর্তৃত্বপরায়ণ পিতাকে উচ্ছেদ করো,

তার উত্তরাধিকার অস্বীকার করো, এবং নিজের তরিকায় করে

উজ্জ্বল হয়ে ক্ষমতায় আরোহণ করো।


সূত্র ৪২:-রাখালকে মারো তাহলে ভেড়াগুলি নিজে থেকেই ছড়িয়ে যাবে,

সব নষ্টের গোড়া দেখতে গেলে প্রায়শ একজন মাত্র শক্ত গোছের আদমি হয়ে থাকে —

যে হোতা, যে উদ্ধত শিষ্য, মঙ্গলের বিনাশী। যদি এই ধরনের মানুষের হাতে কাজের

ভার দাও, অন্যরা তার সংসর্গে পড়বে। তাদের একটা না একটা ঝামেলা পাকান

পর্যন্ত অপেক্ষা করো না, তাদের সাথে আপোষের চেষ্টা করো না —

ওরা পরিত্রাণযোগ্য না। ওদের একঘরে বা একলা করে রেখে অসাড় করে দাও।

সমস্যার মূলে কুঠারাঘাত করলে ডালপালা এমনিতেই ধসে পড়বে।


সূত্র ৪৩:-অন্যদের মন আর আবেগ নিয়ে খেলো,

বলপ্রয়োগ করে কিছু করলে হিতে বিপরীত হতে পারে। তোমার মর্জি মতো

চলার জন্য অন্যকে প্রলুদ্ধ করতে হবে। যাকে তুমি পটিয়ে ফেলো সে তোমার

বিশ্বস্ত সৈন্যে পরিণত হয়। আর লোক-ভোলানর উপায় হচ্ছে তাদের পৃথক

পৃথক মনস্তত্ব আর দুর্বলতাগুলো নিয়ে কাজ করা। অপর পক্ষ থেকে প্রতিরোধ

হ্রাস করতে গেলে তাদের আবেগ নিয়ে কাজ করতে হবে, তারা যা কিছু ভালবাসে,

যা কিছু ভয় পায় সেসব নিয়ে খেলতে হবে। অন্যদের মন আর আবেগকে যদি

উপেক্ষা করো তো তারা একদিন তোমাকে ঘৃণা করবে।


সূত্র ৪৪:-আয়নাবাজির দ্বারা সবাইকে বিভ্রান্ত আর ক্ষিপ্ত করে তোলো,

আয়না বাস্তবতার প্রতিফলন দেখায়, এমনকি এটা ধোঁকাবাজিরও মোক্ষম হাতিয়ার:

শত্রুদের চাল হুবহু নকল করার মধ্য দিয়ে যদি তুমি তাদের সামনে একটা আয়না

ধরে রাখো, তারা তোমার কৌশল বুঝে উঠতে পারবে না। দর্পণ প্রভাব ওদের

ভ্যাঙচায় এবং অপমানিত করে, ওদের মাথা খারাপ করে দেয়। ওদের মনের সামনে

আরশি ধরলে, তুমি তাদের এই ছলনায় ভোলাতে পার যে তোমাদের উদ্দেশ্য এক;

ওদের কাজকর্মের সামনে আরশি ধরলে, তুমি তাদের একখানা শিক্ষা দিতে পার।

খুব কম লোকই আয়নাবাজির ক্ষমতাকে প্রতিহত করতে পারবে।



সূত্র ৪৫:-বদলের গান গাও, কিন্তু একবারে খুব

বেশি সংস্কার করতে যেওনা,

পরিবর্তনের গুরুত্ব ওপরে ওপরে প্রত্যেকেই বোঝে, কিন্তু দৈনন্দিন পর্যায়ে

মানুষ অভ্যাসের দাস। খুব বেশি নতুনত্ব ক্ষতিকর, উপরন্তু বিদ্রোহের কারণ হয়।

যদি ক্ষমতাশীল অবস্থানে নতুন হও, অথবা বহিরাগত হিসাবে প্রতিপত্তির ভিত্তি

গড়তে যাও, পুরনো কায়দাসমূহের প্রতি সম্মান দেখানর ভান করো।

যদি পরিবর্তন আবশ্যক হয়, তাকে যেন অতীতেরই সামান্য একটু পরিবর্ধন বলে মনে হয়।


সূত্র ৪৬:-নিজেকে অতি নিখুঁত দেখিও না,

আর সকলের চেয়ে ভালো হওয়া সবসময় বিপজ্জনক,

কিন্তু সব থেকে ঝুঁকিপূর্ণ হলো কোনো ত্রুটি অথবা দুর্বলতা না থাকা।

হিংসা নীরব শত্রু তৈরি করে। সময় সময় নিজের খুঁত প্রকাশ করা

আর নিরীহ দোষ স্বীকার করাটা বুদ্ধিমানের কাজ, তাতে করে ঈর্ষা

এড়ান যায় এবং নিজেকে আরো বেশি মানবিক ও অভিগম্য দেখান যায়।

কেবলমাত্র ইশ্বর আর মৃতরাই নিখুঁত হওয়ার অধিকার রাখে।


সূত্র ৪৭:-লক্ষ্যকে অতিক্রম করে যেও না; বিজয়ে কোথায়

থামতে হবে তা জেনো,

জয়ের মুহূর্তটাই কখনো কখনো আসন্ন সবচেয়ে বড় বিপদের মুহূর্ত। বিজয়ের উত্তাপে,

দাম্ভিকতা আর অতি আত্মবিশ্বাস তোমাকে লক্ষ্য ছাড়িয়ে আরো দূরে ঠেলে দিতে পারে,

আর একবার বেশি দূরে চলে গেলে, তুমি যত শত্রুকে পরাজিত করেছ

শত্রুসংখ্যা তার চেয়ে বেড়ে যায়। সুচিন্তিত পরিকল্পনা আর কর্মকৌশলের

কোনো বিকল্প নাই। একটা নিশানা রাখো, আর সেটা যখন ছুঁয়ে ফেলবে, থেমে যাও।


সূত্র ৪৮:-আকারহীনতা ধারণ করো,

একটা আকৃতি নিয়ে, একটা দৃশ্যমান পরিকল্পনা রেখে, তুমি নিজেকে আক্রমণের

জন্য উন্মুক্ত করে ফেলবে। আকার নিয়ে দুশমনের মুঠোয় ধরা না দিয়ে বরং

নিজেকে পরিবর্তন আর চলমানতার মধ্যে রাখো। এই তত্ত্বটা মেনে নাও

যে কোনো কিছুই ধ্রুব নয় এবং কোনো আইন স্থির নয়।

আত্মরক্ষার উত্তম উপায় হলো জলের ন্যায় তরল আর নিরাকার থাকা;

কখনো স্থায়িত্ব অথবা টেকসই শৃঙ্খলার ওপর আস্থা রেখো না। সবই বদলায়। 





Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.